হাফেজ মাওলানা মুফতী মুহাম্মাদ আবদুর রহমান আজাদ
খলিফা : শাইখুল হাদীস মুফতী জাফর আহমাদ দা. বা.(ঢালকানগর) ও
শায়েখ সাঈদুর রহমান আল-মাদানি ( মদিনা মুনাওয়ারা )
প্রতিষ্ঠাতা : আল-কারীম ইন্টারন্যাশনাল মাদরাসা, ঢাকা সদস্য : মজলিসে খাছ, বামুক
উৎসর্গ : ইলমে হাদীসের উজ্জ্বল নক্ষত্র ইমাম বুখারী রহ. সহ ইসলামের সূচনালগ্ন থেকে অদ্যাবধি যেসব মহামনীষীগণ ইলমে হাদীসের খেদমতে নিজেদেরকে উৎসর্গ করেছেন তাঁদের দারাজাত বুলন্দীর আশায় ।
লেখকের কথা
আল্লাহ তা’আলা হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম এর মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর যে ওহী নাযিল করেছেন তা মূলত দুই প্রকার। এক. “ওহীয়ে মাতলূ” (وحى متلو) তথা পবিত্র কুরআন। যার ভাব ও ভাষা উভয়ই আল্লাহ তা’আলার। হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম যেভাবে পাঠ করে শুনিয়েছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুবহু সেভাবেই তা প্রকাশ করেছেন। এ মর্মে স্বয়ং আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوَىٓ ﴿৩﴾ إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُوحَى “তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মনগড়া কোনো কথা বলেন না; বরং তিনি যা কিছু বলেন তা ওহী।”Ñ(সূরা নাজম: ৩-৪) দুই. “ওহীয়ে গাইরে মাতলূ” (وحى غيرمتلو) (তথা বিশুদ্ধ হাদীস)। যার ভাব আল্লাহ তা’আলার, কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের ভাষায়, নিজের কথায় এবং নিজের কাজ ও সম্মতির মাধ্যমে তা প্রকাশ করেছেন। আল্লাহ তা’আলার পবিত্র কুরআন এবং রাসূলের হাদীস উভয়ই ওহী। একটি প্রত্যক্ষভাবে প্রাপ্ত ওহী, আরেকটি পরোক্ষভাবে প্রাপ্ত ওহী। আল্লাহ তাআলা ইসলামের যেসব বিধি-বিধান সংক্ষিপ্তভাবে পবিত্র কুরআনে পেশ করেছেন বা ইঙ্গিত প্রদান করেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বাস্তবায়ন পদ্ধতি সবিস্তারে হাদীসে বাতলে দিয়েছেন। এককথায়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীসগুলোই হলো পবিত্র কুরআনের ব্যাখ্যা। প্রতিটি উম্মতের জন্য যেমনিভাবে কুরআন পড়া ও সে অনুযায়ী আমল করা জরুরী, তেমনিভাবে হাদীস অধ্যয়ন করা ও সে অনুযায়ী আমল করাও জরুরী। এ মর্মে স্বয়ং আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- وَمَآ اٰتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا অর্থাৎ রাসূল তোমাদের যে নির্দেশনা প্রদান করেন তা গ্রহণ করো এবং যা নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাকো। (সূরা হাশর-৭) ইমাম বুখারী রহ. দীর্ঘ ১৬ বছর সাধনা করে ৬ লক্ষাধিক হাদীস থেকে শুদ্ধতার কষ্টিপাথরে যাচাই বাছাই করে সহীহ বুখারী সংকলন করেছেন। এই ১৬ বছর তিনি বিরতিহীনভাবে রোজা রাখতেন এবং প্রতিটি হাদীস লিপিবদ্ধ করার পূর্বে গোসল করত মসজিদে নববীতে দু’রাকাত সালাত আদায় করে হাদীসের বিশুদ্ধতার প্রতি ধ্যান করতেন। এরপর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে স্পষ্ট রূহানী ইঙ্গিত ও নির্মল প্রশান্তি লাভের পরই হাদীসটি লিপিবদ্ধ করতেন। সম্ভবত তাঁর এই কঠিন সাধনা ও ত্যাগের কারণেই বুখারী শরীফ পৃথিবীর বুকে কুরআনের পরেই শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে। এজন্য তামাম দুনিয়ার সকল আলিম, ফকীহ ও হাদীসবিশারদগণ এ ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন যে- اصح الكتاب بعد كتاب الله الجامع الصحيح للبخارى ‘অর্থাৎ আল্লাহর কিতাবের পর সবচে’ বিশুদ্ধতম কিতাব হলো ‘আল-জামিউস সহীহ বুখারী।’ এ ব্যাপারে উলামায়ে কিরাম সকলেই একমত যে, উলূমুল হাদীস ব্যতীত পরিপূর্ণভাবে কুরআন বুঝা, তার মর্ম উপলব্ধি করা এবং নিজের জীবনে তা বাস্তবায়ন করা কোনভাবেই সম্ভব নয়। এজন্যই যুগে যুগে আমাদের আকাবির ও আসলাফগণ পবিত্র কুরআনের পাশাপাশি রাসূলের হাদীস সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণের কাজে নিজেদের আত্মোৎসর্গ করেছেন। রচনা করেছেন হাদীসের অসংখ্য ব্যাখ্যাগ্রন্থ। কিন্তু একথা সত্য যে, আরবী ও উর্দূ ভাষায় সহীহ বুখারীর একাধিক শরাহ-শরূহাত রচিত ও অনুদিত হলেও বাংলা ভাষায় তা একেবারে নগণ্য। আমাদের জাতীয় প্রতিষ্ঠান ইসলামিক ফাউ-েশনসহ বেশ কিছু প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে মূল বুখারী শরীফের অনুবাদ করা হলেও মতবিরোধপূর্ণ মাসাইলের যথার্থ ব্যাখ্যা ও টীকা-টিপ্পনী সংযোজন না করায় সাধারণ শ্রেণির লোকদের জন্য ঐসব ইখতিলাফি হাদীসের সঠিক মর্ম উদ্ঘাটন করা অত্যন্ত জটিল হয়ে পড়েছে। ফলে একশ্রেণির অল্প শিক্ষিত ও জ্ঞান পাপীরা ঐসব হাদীসের ব্যাখ্যায় নিজেদের ভ্রান্তমত প্রকাশ করে সমাজে বিশৃংখলা সৃষ্টি করেছে। ফলে হাদীস নিয়ে কোথাও বেশি বাড়াবাড়ি, কোথাও ছাড়াছাড়ি আবার কোথাও বা মারামারি পর্যন্ত ঘটেছে। এ বিষয়টি তাকমীল বর্ষে থাকাবস্থায় উপলব্ধি করতে পারলেও নিজের ইলমী দূর্বলতা ও অযোগ্যতার কারণে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজে শত ইচ্ছা থাকা সত্বেও হাত দিতে সাহস পাইনি। তবে প্রত্যাশা ছিলো, কখনো আল্লাহ তা’আলা হাদীসের খেদমত করার তাওফীক দিলে “সিহাহ সিত্তা” তথা বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ ও ইবনে মাজাহ এই ছয়টি কিতাবের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ বিশুদ্ধ অনুবাদের কাজে হাত দিবো। এরপর ফতোয়া বিভাগ থেকে সালানা পরীক্ষায় (১ম স্থান) উত্তীর্ণ হওয়ার পর আমার প্রিয় উস্তাদ লালবাগ জামেয়ার প্রধান মুফতী হযরত মাওলানা ইয়াহইয়া সাহেব (দা. বা.) এর নির্দেশে ও আমার সহপাঠী বন্ধুবর হাফেজ মাওলানা জসীম উদ্দীন (সোনারগাঁও) এর অনুরোধে ঢাকার একটি মাদরাসায় হাদীসের খেদমত (মুসলিম ছানী পড়াতে) আরম্ভ করি এবং তাদরীসের পাশাপাশি শত দূর্বলতা ও অযোগ্যতা সত্বেও কিছু কিছু তাছনীফাতের (হাদীসের অনুবাদ ও ব্যাখ্যা লিখার) কাজও শুরু করি। আল্লাহ পাকের খাস মেহেরবানী ও উস্তাদগণের নেক দুআর বরকতে অল্প সময়ের মধ্যে “ইফাদাতুল মুসলিম ফী হল্লে সহীহ মুসলিম” নামে মুসলিম দ্বিতীয় খ-ের একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যাগ্রন্থ রচনার তাওফীক হয়। যা আগষ্ট-২০১১ সনে বাংলাবাজারস্থ ‘দারুল হাদীস’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রকাশিত হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ, বর্তমানে এ কিতাবটি দাওরায়ে হাদীসের ছাত্রদের কাছে সর্বাধিক সমাদৃত। প্রকৃতপক্ষে হাদীসের খেদমত যে কত কঠিন তা ছাত্র যামানায় উপলব্ধি করতে না পারলেও পরবর্তীতে তাদরীস ও তাছনীফাতের কাজে হাত দিয়ে বুঝতে পেরেছি। কেননা এক একটি শব্দের মধ্যে হাজারো অর্থ লুকানো রয়েছে। এক একটি হাদীস থেকে শত সহস্র মাসআলা উৎসারিত হয়েছে। যার মর্ম উদ্ঘাটন করা একমাত্র আল্লাহ পাকের খাছ মেহেরবানী ছাড়া কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। মুসলিম শরীফের শরাহগ্রন্থ “ইফাদাতুল মুসলিম” সমাপ্ত হওয়ার পর সর্বপ্রথম আমার প্রাণপ্রিয় শায়েখ ঢালকানগর বাইতুল উলূম মাদরাসার স্বনামধন্য প্রিন্সিপাল ও শাইখুল হাদীস আল্লামা মুফতী জাফর আহমাদ সাহেব দা. বা. এর নিকট তা পেশ করলাম। তিনি অত্যন্ত খুশি হলেন এবং খুব দুআ’ করলেন। এরপর তিনি সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ ‘বুখারী শরীফের তরজমা করারও নির্দেশ দিলেন। কিন্তু আমি অধম এ কাজে নেহায়েত দূর্বল ও অযোগ্য। তাই কোনোভাবেই যেন এ কাজে হাত দিতে সাহস পাচ্ছিলাম না। সর্বশেষ গত দু’বছর আগে তিনি আমাকে বললেন, মাওলানা! قابليت (যোগ্যতা) শর্ত নয়, বরংقبوليت (আল্লাহর দরবারে কবুল হওয়া) শর্ত। তুমি ইখলাসের সাথে কাজ করো এবং খুব দুআ’ করতে থাকো। আল্লাহ যাকে পছন্দ করেন তার দ্বারাই এই খেদমত নেন। এরপর আমার শায়েখের নির্দেশে শুধু আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করেই কলম হাতে নিলাম। প্রথমে (১ম খ-ের) অনুবাদ শেষ করলাম। তারপর টীকা-টিপ্পনীর মাধ্যমে হাদীসসংশ্লিষ্ট সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাও সংযোজন করলাম। নিজের ইলমী দূর্বলতার কারণে প্রতিটি হাদীসের ব্যাখ্যা প্রদান করতে পারিনি। তবে যেসব হাদীসের মাসাইলে ইখতিলাফ রয়েছে সংক্ষিপ্তাকারে হলেও ঐসব হাদীসের ব্যাখ্যা প্রদানের চেষ্টা করেছি। বক্ষ্যমান এ কিতাবটি বাজারের অন্যান্য অনুবাদগ্রন্থ থেকে একটু ব্যতিক্রম। এ কিতাবটির এমন কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা অন্যান্য কিতাবে বিরল। সেখান থেকে কয়েকটি বৈশিষ্ট্য নিম্নে উল্লেখ করা হলো: (১). সনদসহ হাদীসের মূল ইবারত উল্লেখ করা হয়েছে, (২). হাদীসের হুবহু অনুবাদ করা হয়েছে, (৩). হাদীসের প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা ও ইখতিলাফী মাসাইলের দলিলভিত্তিক সমাধান দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, (৪). সৌদী আরব, মিশর, কাতার, লেবানন থেকে প্রকাশিত আন্তর্জাতিক মানের কিতাবসমূহ সামনে রেখে মূল কিতাব অনুযায়ী অধ্যায়, অনুচ্ছেদ ও হাদীসগুলো সুবিন্যস্ত করা হয়েছে, (৫). আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হাদীসের ক্রমিক নম্বর প্রদান করা হয়েছে, (৬). আন্তর্জাতিক নম্বরের পাশাপাশি আমাদের জাতীয় প্রতিষ্ঠান ইসলামিক ফাউ-েশনের নম্বরও উল্লেখ করা হয়েছে, (৭). প্রতিটি হাদীসকে তাখরীজ করা হয়েছে অর্থাৎ আলোচ্য হাদীসটি বা হাদীসের আংশিক বুখারীর কত জায়গায় এবং অন্যান্য হাদীসগ্রন্থের কোথায় কোথায় আছে তা উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন- إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ এটি সহীহ বুখারীর হাদীস নং-১, ৫৪, ২৫২৯, ৩৮৯৮, ৫০৭০, ৬৬৮৯, ৬৯৫৩, ইসলামিক ফাউ-েশন-১, মুসলিম-৫০৩৬, আবু দাউদ-২২০৩, নাসাঈ-৭৫, ৩৪৩৭, ৩৭৯৪, তিরমিযী-১৬৪৭, মুসনাদে আহমাদ- ১৬৮, ৩০০ ইত্যাদি (উল্লেখ্য যে, এ ক্ষেত্রে “মাকতাবাতুস সাফা” মিশর থেকে প্রকাশিত মূল বুখারীর অনুসরণ করা হয়েছে) (৮). দক্ষ ও অভিজ্ঞ আলিম দ্বারা সম্পাদনা করা হয়েছে (৯). দেশের সর্বোচ্চ আলিম ও শাইখুল হাদীসগণকে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য রাখা হয়েছে ইত্যাদি। বক্ষ্যমান কিতাবটি প্রয়োজনীয় সম্পাদনা করেছেন ‘বাংলাদেশ ইসলামিক কি-ারগার্টেন এসোসিয়েশন’ এর সম্মানিত চেয়ারম্যান, উদীয়মান লেখক ও শিক্ষা সংস্কারক হযরত মাওলানা কাজী মুহাম্মাদ আশরাফুল আলম। তিনি হাতিমে কা’বা ও রিয়াজুল জান্নায় বসেও বিশেষ বিশেষ স্থানে সম্পাদনা করেছেন। কিতাবটি প্রুফ দেখে প্রয়োজনীয় সংশোধন করেছেন মেধাবী ছাত্র বন্ধুবর মুহাম্মাদ আবু সায়েম, আহমাদ নূর, মুহা. তরিকুল ইসলাম, মুহা. ইখলাসুর রহমান, মুহা. রাকিবুল হাসান ও মুহা. গোলাম কামরুল হাসান। আমি সকলের প্রতি কৃতজ্ঞ। আল্লাহ সবাইকে জাযায়ে খায়ের দান করুন। কিতাবটি প্রকাশ ও ব্যাপক প্রচারের ক্ষেত্রে সর্বাধিক সহযোগিতা করেছেন খ্যাতিমান কলামিষ্ট ও সম্পাদক, বহু মাদরাসা-মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা, বাংলাদেশ মুজাহিদ কমিটির সেক্রেটারী জেনারেল, আলহাজ ডা. মোখতার হুসাইন ও জয়েন্ট সেক্রেটারী জনাব হযরত মাওলানা আবু জাফর আহমাদুল্লাহ দা. বা.। এছাড়াও আমার অনেক উস্তাদ, ছাত্র ও হিতাকাঙ্খী দুআ’ ও পরামর্শের মাধ্যমে সহযোগিতা করেছেন। আমি সকলের কাছে ঋণী। দুআ’ করি আল্লাহ যেন সকলকে জাযায়ে খায়ের দান করেন। পরিশেষে সুহৃদ পাঠক মহলের প্রতি আবেদন, নির্ভুল একটি কিতাব উপহার দিতে প্রচেষ্টায় কোন কার্পণ্য করিনি। তারপরেও এটা যেহেতু অদক্ষ হাতের প্রচেষ্টা, তাই হয়তো আপনাদের নজরে ধরা পড়বে অজস্র ত্রুটি। তবে কোনো ত্রুটি আপনাদের দৃষ্টিগোচর হলে অবহিত করবেন। ইনশাআল্লাহ পরবর্তী সংস্করণে সংশোধন করার ওয়াদা রইলো। সর্বশেষ আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করি, তিনি যেন ইলমে হাদীসের এই সামান্য খেদমতটুকু বিশ্বব্যাপী কবুল করেন এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে পরকালে নাজাত দান করেন।- আমীন
শাইখুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমাদ শফী দা. বা.
আল-জামিয়াতুল আহ্লিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী’র মহাপরিচালক, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ’ এর সম্মানিত চেয়ারম্যান
দু‘আ ও অভিমত :
وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوَىٓ * إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُوحَى (سورة النجم) উপরে বর্ণিত আয়াত দু’টি প্রমাণ করে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতিটি কথাও ওহী। কেননা, আয়াতদ্বয়ে ঘোষণা করা হয়েছে, ‘তিনি মনগড়া কোনো কথা বলেন না; বরং যা কিছু বলেন তা ওহী।’ তবে কুরআন হচ্ছে-وحى متلو তথা প্রত্যক্ষ ওহী, আর রাসূলের হাদীসগুলো-وحى غيرمتلو তথা পরোক্ষ ওহী। এ জন্যে হযরত সাহাবায়ে কিরাম থেকে অদ্যাবধি পর্যন্ত প্রত্যেক যুগের মহামনীষীগণ কুরআনের পাশাপাশি হাদীস সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণের কাজে নিজেদেরকে উৎসর্গ করেছেন। বিশেষত ইমাম বুখারী রহ. দীর্ঘ ১৬ বছর অক্লান্ত সাধনা করে বুখারী শরীফ সংকলন করেছেন। এই ১৬ বছর তিনি বিরতিহীনভাবে রোযা রেখেছেন এবং প্রতিটি হাদীস লিপিবদ্ধ করার পূর্বে রাসূলের রাওজার পাশে দাঁড়িয়ে দু’রাকআত নামাজ আদায় করেছেন। ইমাম বুখারীর ন্যায় প্রত্যেক যুগে নবীপ্রেমিক আলিমগণ হাদীসের খেদমতের জন্য নিজেদেরকে কুরবানী করেছেন। কেউ তাদরীসের মাধ্যমে, কেউ তাসনীফাতের মাধ্যমে আবার কেউ দাওয়াতে ইলাল্লাহ এর মাধ্যমে। আর এভাবে কিয়ামত পর্যন্ত কেউ না কেউ হাদীসের খেদমতের সাথে নিয়োজিত থাকবে। আমার পরামর্শ ও তত্বাবধানে পরিচালিত ‘জামিয়াতুল আনওয়ার ঢাকা’ এর সিনিয়র উস্তাদ, ঢালকানগর মাদ্রাসার পরিচালক মুফতি জাফর আহমাদ সাহেবের সুযোগ্য খলিফা স্নেহধন্য মুফতি আবদুর রহমান আজাদ “তোহফাতুল বারী শরহে সহীহ বুখারী” নামে বুখারী শরীফের একটি অনবদ্য বাংলা শরাহগ্রন্থ রচনা করেছে। প্রতিটি হাদীসের শাব্দিক তরজমাসহ বিশেষ বিশেষ স্থানে টীকা ও প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা সংযোজন করেছে। জটিল ও ইখতিলাফী মাসাইলের দলিলভিত্তিক ও গ্রহণযোগ্য সমাধানও দিয়েছে। তাছাড়া আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে তরজমাতুল বাব, হাদীসের নম্বর ও অধ্যায় কায়েম করেছে এবং প্রতিটি হাদীসকে তাখরীজ করেছে। আমি আশাকরি কিতাবটি থেকে তাকমিল জামা’আতের শিক্ষার্থীরা বিশেষ ফায়দা হাসিল করতে পারবে। দু’আ করি আল্লাহ যেন মুফতি আবদুর রহমান আজাদ-কে ‘হায়াতে তায়্যিবা’ দান করেন এবং কিতাবের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে পরকালে নাজাত দেন। -আমীন ।



আলহাজ হযরত মাওলানা মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করিম দা. বা.
জামিয়া রশিদিয়া আহসানাবাদ চরমোনাই এর মহাপরিচালক, আমীরুল মুজাহিদীন (পীর সাহেব চরমোনাই)
দু‘আ ও বাণী :
وَمَآ اٰتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا….. মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের পরে শরীয়তের দ্বিতীয় দলিল হচ্ছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ‘পবিত্র হাদীস’। ‘কুরআন’ এবং রাসূলের ‘হাদীস’ উভয়ই ওহী। একটি প্রত্যক্ষভাবে প্রাপ্ত ওহী, আরেকটি পরোক্ষভাবে প্রাপ্ত ওহী। এজন্যে যুগে যুগে আমাদের আকাবির ও আসলাফগণ পবিত্র কুরআনের পাশাপাশি হাদীস সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণের কাজে নিজেদেরকে উৎসর্গ করেছেন। ইমাম বুখারী রহ. দীর্ঘ ষোল বছর বিরতিহীন রোযা রেখে এবং অক্লান্ত পরিশ্রম করে ৬ লক্ষ হাদীস থেকে যাচাই-বাছাই করে বুখারী শরীফ সংকলন করেছেন। প্রতিটি হাদীস লিপিবদ্ধ করার পূর্বে রাসূলের রাওজা মুবারকের পাশে দাঁড়িয়ে দু’রাকআত নামাজ আদায় করতেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে স্পষ্ট রূহানী ইঙ্গিত পাওয়ার পর হাদীসটি লিপিবদ্ধ করতেন। মূল আরবী ইবারত ঠিক রেখে হাদীসের সাবলীল তরজমা ও প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা প্রদান করা জটিল একটি কাজ। কিন্তু আমার একান্ত প্রিয়ভাজন উদীয়মান লেখক ও শিক্ষা সংস্কারক মুফতি আবদুর রহমান আজাদ ‘তোহফাতুল বারী শরহে সহীহ বুখারী’ নামে সহীহ বুখারীর একটি অনবদ্য বাংলা শরাহগ্রন্থ রচনা করেছে। কিতাবটি বেশ তথ্যসমৃদ্ধ ও সময়োপযোগী। আমি আশাকরি এই কিতাবটি আলিম, গাইরে আলিম সকলের জন্যে সহায়ক হবে। বিশেষত যারা গবেষক ও দলিলভিত্তিক কথা বলতে অভ্যস্ত তারা বেশি ফায়দা হাসিল করতে পারবে। মুফতি আবদুর রহমান আজাদ ইতোপূর্বে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কিতাব রচনা করেছে। এর মধ্যে (ক). হাদীসের দলিলসহ নবীজীর ৩০ প্রকার নামাজ, (খ). ফাযায়েলে তা’লীম, (গ). তোহফাতুল বারী শরহে সহীহ বুখারী ১ম ও ২য় খন্ড (ঘ). ইফাদাতুল মুসলিম ফী হল্লে সহীহ মুসলিম (ঙ). চরিত্র গঠন (চ). রিয়াযুস সালিহীন ১ম ও ২য় খন্ড’ ইত্যাদি। তার প্রতিটি কিতাবই দলিলভিত্তিক ও সময়োপযোগী। বর্তমান ফিৎনা-ফাসাদের যুগে বাতিলের মোকাবেলা করার জন্য তার সবগুলো কিতাবই পড়া উচিত। বিশেষত তথাকথিত আহলে হাদীসসহ যারা নামাজ নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে তাদের জবাব দেয়ার জন্যে ‘হাদীসের দলিলসহ নবীজীর ৩০ প্রকার নামাজ’ এ কিতাবটি প্রত্যেকেরই পড়া উচিত। আমি দু’আ করি, আল্লাহ যেন মুফতি আবদুর রহমান আজাদ-কে হায়াতে তায়্যিবা দান করেন এবং তার কলমকে ইসলামের জন্য আরো শাণিত করেন। আরো দুআ করি, কিয়ামতের ময়দানে এই কিতাবের লেখক, পাঠক, প্রকাশক ও সংশ্লিষ্ট সকলকে নাজাত দান করেন। আমীন ।

আল্লামা মুফতী জাফর আহমাদ সাহেব দা. বা.
হযরত মাওলানা শাহ হাকীম মুহাম্মাদ আখতার সাহেব রহ. ( করাচী, পাকিস্তান ) এর প্রধান খলিফা ঐতিহ্যবাহী ঢালকানগর মাদরাসার স্বনামধন্য প্রিন্সিপাল ও শাইখুল হাদীস
অভিমত ও দু’আ
نَحْمَدُه وَنُصَلِّ عَلٰى رَسُوْلِهِ الْكَرِيْمِ اَمَّا بَعْدُ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আমি তোমাদের মাঝে দু’টো জিনিস রেখে গেলাম, একটি হলো মহাগ্রন্থ ‘আল কুরআন’ আরেকটি হলো পবিত্র ‘হাদীস’। তোমরা যতদিন এই দু’টো জিনিস আঁকড়ে ধরবে, ততদিন কেউ তোমাদের পথভ্রষ্ট করতে পারবে না, বরং হেদায়েতের উপরই প্রতিষ্ঠিত থাকবে। রাসূলের এই বাণী দ্বারা পরিস্কার বোঝা যায়, যেমনিভাবে পবিত্র কুরআন পড়া ও তার উপর আমল করা জরুরী, তেমনিভাবে হাদীস পড়া এবং সে অনুযায়ী আমল করাও জরুরী। এজন্যে যুগে যুগে আমাদের আকাবির ও আসলাফগণ কঠিন মুজাহাদা করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্ল¬াম এর হাদীসগুলো সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণের কাজে নিজেদের আত্মোৎসর্গ করেছেন। এ ব্যাপারে দুনিয়ার সকল আলিম, ফকীহ ও হাদীসবিশাদরগণ একমত যে, اَصَحُّ الْكِتَابِ بَعْدَ كِتَابِ اللهِ তথা মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের পরে সর্বাধিক বিশুদ্ধতম ও গ্রহণযোগ্য কিতাব হলো “সহীহ আল-বুখারী”। ইমাম বুখারী রহ. দীর্ঘ ১৬ বছর সাধনা করে বুখারী শরীফ সংকলন করেছেন। প্রতিটি হাদীস লিপিবদ্ধ করার পূর্বে গোসল করে প্রিয় নবীজীর রাওজার পাশে দাঁড়িয়ে দু’রাকআত নামাজ পড়েছেন। এরপর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্ল¬ামের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট রূহানী ইঙ্গিত পেলে হাদীসটি তাঁর কিতাবে সন্নিবেশিত করেছেন। সেই বুখারী শরীফের তরজমা ও শরাহ লেখা অত্যন্ত জটিল একটি কাজ। তথাপি আমার স্নেহাস্পদ মাওলানা আবদুর রহমান আজাদ অত্যন্ত হিম্মতের সাথে এ কাজে হাত দিয়েছে এবং আল্লাহ পাকের মেহেরবানীতে ‘তোহফাতুল বারী শরহে সহীহ বুখারী’ নামে বুখারী শরীফের একটি শরাহগ্রন্থ রচনা করেছে। আমি এর পা-ুলিপি দেখেছি। প্রতিটি হাদীসের সহজ-সাবলীল অনুবাদের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় টীকা-টিপ্পনীসহ ইখতিলাফী মাসাইলের দলিলভিত্তিক সমাধানও দিয়েছে। আমি বিশেষ বিশেষ স্থানে নজর করে অত্যন্ত খুশি হয়েছি এবং বেশ কিছু স্থানে প্রয়োজনীয় সংশোধনও করে দিয়েছি। আমি আশাকরি কিতাবটি উলামা, তুলাবাসহ সর্বস্তরের মানুষের জন্য ফায়দা হবে। দুআ করি আল্লাহ যেন মাওলানা আবদুর রহমান আজাদ-কে হায়াতে তায়্যিবা দান করেন, বিশ্বব্যাপী তার এ খেদমতকে কবুল করেন এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে পরকালে নাজাত দান করেন।-আমীন




আল্লামা মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করিম দা. বা.
জামিয়া রশিদিয়া আহসানাবাদ চরমোনাই এর স্বনামধন্য শাইখুল হাদীস, মুনাযেরে আ’যম (পীরে কামেল চরমোনাই)
দু‘আ ও বাণী :
نَحْمَدُهٗ وَنُصَلِّىْ عَلٰى رَسُوْلِهِ الْكَرِيْمِ اَمَّا بَعْدُ ইমাম বুখারী রহ. দীর্ঘ ষোল বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে ৬ লক্ষাধিক হাদীস থেকে শুদ্ধতার কষ্টিপাথরে যাচাই-বাছাই করে ‘বুখারী শরীফ’ সংকলন করেছেন। প্রতিটি হাদীস লেখার পূর্বে তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রাওজার পাশে দাঁড়িয়ে দু’রাকআত নামাজ পড়তেন এবং হাদীসের বিশুদ্ধতার প্রতি মুরাকাবা করতেন। এরপর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে স্পষ্ট রূহানী ইঙ্গিত পেলেই হাদীসটি লিপিবদ্ধ করতেন। এ জন্য পৃথিবীর সকল আলিম, ফকীহ ও হাদীসবিশাদরগণ এ ব্যাপারে একমত যে, اَصَحُّ الْكِتَابِ بَعْدَ كِتَابِ اللهِ اَلْجَامِعُ الصَّحِيْحُ لِلْبُخَارِىْ ‘অর্থাৎ কিতাবুল্লাহর পরে সর্বাধিক বিশুদ্ধতম কিতাব হলো ‘সহীহ বুখারী।’ বুখারী শরীফের সাবলীল তরজমা ও শরাহ লেখা অত্যন্ত কঠিন কাজ। কিন্তু আমার একান্ত স্নেহধন্য মুফতী আবদুর রহমান আজাদ ‘তোহফাতুল বারী শরহে সহীহ আল-বুখারী-৩ নামে বুখারী শরীফের অনবদ্য বাংলা শরাহগ্রন্থ রচনা করেছে। কিতাবটি আমি দেখেছি। বেশ তথ্যসমৃদ্ধ ও সময়োপযোগী। বাজারের অন্যান্য অনুবাদগ্রন্থ থেকে এ কিতাবটির আলাদা কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন- (ক). প্রথমে মূল হাদীসটি উল্লেখ করে হাদীসের হুবহু তরজমা করা হয়েছে (খ). হাদীসের অনুবাদ ও বিন্যাসের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখা হয়েছে (গ). যেসব হাদীস ও মাসাইলে ইখতিলাফ রয়েছে যথেষ্ট দলিল-প্রমাণসহ তার সমাধান দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে (ঘ). প্রতিটি হাদীসকে তাখরীজ করা হয়েছে অর্থাৎ, বর্ণিত হাদীসটি অন্যান্য কিতাবের কোথায় কোথায় আছে তা উল্লেখ করেছেন। এসব বৈশিষ্ট্যের কারণে কিতাবটি সাধারণ পাঠক-পাঠীকাসহ তাকমিল জামাতের ছাত্র-ছাত্রী ও গবেষকদের জন্য বিশেষ ফায়দা হবে বলে মনে করি। মুফতি আবদুর রহান আজাদ ইতোপূর্বে মুসলিম দ্বিতীয় খন্ডের ব্যাখ্যাগ্রন্থ “ইফাদাতুল মুসলিম ফী হল্লে সহীহ মুসলিম; ‘হাদীসের দলিলসহ নবীজীর ৩০ প্রকার নামাজ, ‘ফাযায়েলে তা’লীম, ‘চরিত্র গঠন’ সহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কিতাব রচনা করেছে। আমি তার প্রতিটি কিতাব অধ্যয়ন করেছি। প্রতিটি কিতাবটি তথ্যসমৃদ্ধ ও দলিলভিত্তিক হওয়ায় পাঠকমহলের কাছে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেছে। আমি দুআ’ করি আল্লাহ যেন তার রচিত সবগুলো কিতাবই নাফে‘ আম বানিয়ে দেন এবং কিতাবের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে পরকালে নাজাত দান করেন।-আমীন ।

আল্লামা শায়েখ সাঈদুর রহমান আল-মাদানী দা. বা.
হযরত মাওলানা শাহ হাকীম মুহাম্মাদ আখতার সাহেব রহ. এর সুযোগ্য খলিফা, মসজিদে বনি দীনার (মদিনা শরীফ) এর সম্মানিত ইমাম ( পীরে সাহেব মদিনা মুনাওয়ারা )
অভিমত ও দু’আ :
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মনগড়াভাবে কোনো কথা বলতেন না; বরং যা কিছু বলতেন বা করতেন সব ওহীর ইঙ্গিতেই করতেন। এমর্মে স্বয়ং আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন- وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوَىٓ * إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُوحَى অর্থাৎ, ওহীর ইশারা ব্যতীত তিনি মনগড়াভাবে কোনো কথাই বলতেন না। (সূরা নাজম-৩ ও ৪) তবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি যে ওহী নাযিল হয়েছে তা দু’প্রকার। (ক). ওহীয়ে মাতলূ তথা পবিত্র কুরআন (খ). ওহীয়ে গাইরে মাতলূ তথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র হাদীসসমূহ। যেমনিভাবে ওহীয়ে মাতলূ তথা পবিত্র কুরআনকে মানা এবং সে অনুযায়ী আমল করা জরুরী, তেমনিভাবে রাসূলের পবিত্র হাদীসসমূহ মানা এবং সে অনুযায়ী আমল করাও জরুরী। এ জন্যে হযরত সাহাবায়ে কিরাম থেকে অদ্যাবধি প্রত্যেক যুগের নবীপ্রেমিকগণ কুরআনের পাশাপাশি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র হাদীসসমূহের উপর আমল করে আসছেন এবং তা সংরক্ষণ, সম্প্রসারণ ও তার খেদমতে নিজেদেরকে উৎসর্গ করেছেন। কেউ খেদমত করছেন তাদরীসের মাধ্যমে, কেউ তাসনীফাতের মাধ্যমে, আবার কেউ তা প্রকাশ ও বিনামূল্যে বিতরণের মাধ্যমে। তবে আমি মনে করি, যে যেভাবেই হাদীসের খেদমতের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করেছেন, সে নিঃসন্দেহে ধন্য হয়েছেন। বক্ষ্যমান কিতাবটি সংকলন করেছে আমার স্নেহহভাজন মাওলানা আবদুর রহমান আজাদ। আমি কিতাবটির পান্ডুলিপি দেখেছি। প্রতিটি হাদীস অত্যন্ত সুন্দরভাবে তরজমা, তাহকীক ও তাখরীজ করেছে। বিশেষ বিশেষ স্থানে প্রয়োজনীয় টীকা ও মাসআলা উল্লেখ করেছে। আমি মনে করি, কিতাবটি সকলের জন্যই ফায়দা হবে। আমি তার লিখিত ‘তোহফাতুল বারী শরহে সহীহ বুখারী’র ১ম ও ২য় খন্ড, ‘ফাযায়েলে তালীম, ‘হাদীসের দলিলসহ নবীজীর ৩০ প্রকার নামাজ’………….প্রভৃতি কিতাব পাঠ করেছি। আলহামদুলিল্লাহ, তার প্রতিটি কিতাবে রুহানিয়্যাত থাকায় আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে। বক্ষ্যমান কিতাবটিতে তকরীজ (বাণী) দেয়ার জন্য লেখক আমাকে অনুরোধ জানায়। কিন্তু শাইখুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমাদ শফী দা. বা. এর মতো ব্যক্তিত্ব কিতাবে তকরীজ দেয়ার পর আমার তকরীজের কোনো প্রয়োজন হয় না। তথাপি লেখকের বারবার অনুরোধের কারণে কিছু লিখে দিলাম। মাওলানা আবদুর রহমান আজাদ আমার সাথে ইসলাহী সম্পর্ক রাখে। মদিনায় একটি প্রোগ্রামে আমার সাথে সাক্ষাত হয়েছিলো। এরপর থেকে মাঝে মধ্যে ফোনে কথা হয়। আমি ছেরেফ আল্লাহর জন্যই তাকে মুহাব্বত করি এবং খুব বেশি মুহাব্বত করি। ফলে কখনো রওজার পাশে দাঁড়িয়ে আবার কখনো বাইতুল্লাহর গেলাফ ধরে তার জন্য দুআ করেছি। সর্বশেষ গত ১০/০২/২০১৮ তারিখে বাংলাদেশে সফরে এসে তাকে খেলাফত দিয়েছি। দুআ করি আল্লাহ পাক যেন দুনিয়া ও আখেরাতে তাকে ভরপুর কামিয়াবী দান করেন এবং তার সকল খেদমতকে নাফে’ আম বানিয়ে দেন।-আমীন
আল্লামা শায়েখ সাঈদুর রহমান আল-মাদানী দা. বা.
হযরত মাওলানা শাহ হাকীম মুহাম্মাদ আখতার সাহেব রহ. এর সুযোগ্য খলিফা, মসজিদে বনি দীনার (মদিনা শরীফ) এর সম্মানিত ইমাম ( পীরে সাহেব মদিনা মুনাওয়ারা )
অভিমত ও দু’আ :
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মনগড়াভাবে কোনো কথা বলতেন না; বরং যা কিছু বলতেন বা করতেন সব ওহীর ইঙ্গিতেই করতেন। এমর্মে স্বয়ং আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন- وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوَىٓ * إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُوحَى অর্থাৎ, ওহীর ইশারা ব্যতীত তিনি মনগড়াভাবে কোনো কথাই বলতেন না। (সূরা নাজম-৩ ও ৪) তবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি যে ওহী নাযিল হয়েছে তা দু’প্রকার। (ক). ওহীয়ে মাতলূ তথা পবিত্র কুরআন (খ). ওহীয়ে গাইরে মাতলূ তথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র হাদীসসমূহ। যেমনিভাবে ওহীয়ে মাতলূ তথা পবিত্র কুরআনকে মানা এবং সে অনুযায়ী আমল করা জরুরী, তেমনিভাবে রাসূলের পবিত্র হাদীসসমূহ মানা এবং সে অনুযায়ী আমল করাও জরুরী। এ জন্যে হযরত সাহাবায়ে কিরাম থেকে অদ্যাবধি প্রত্যেক যুগের নবীপ্রেমিকগণ কুরআনের পাশাপাশি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র হাদীসসমূহের উপর আমল করে আসছেন এবং তা সংরক্ষণ, সম্প্রসারণ ও তার খেদমতে নিজেদেরকে উৎসর্গ করেছেন। কেউ খেদমত করছেন তাদরীসের মাধ্যমে, কেউ তাসনীফাতের মাধ্যমে, আবার কেউ তা প্রকাশ ও বিনামূল্যে বিতরণের মাধ্যমে। তবে আমি মনে করি, যে যেভাবেই হাদীসের খেদমতের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করেছেন, সে নিঃসন্দেহে ধন্য হয়েছেন। বক্ষ্যমান কিতাবটি সংকলন করেছে আমার স্নেহহভাজন মাওলানা আবদুর রহমান আজাদ। আমি কিতাবটির পান্ডুলিপি দেখেছি। প্রতিটি হাদীস অত্যন্ত সুন্দরভাবে তরজমা, তাহকীক ও তাখরীজ করেছে। বিশেষ বিশেষ স্থানে প্রয়োজনীয় টীকা ও মাসআলা উল্লেখ করেছে। আমি মনে করি, কিতাবটি সকলের জন্যই ফায়দা হবে। আমি তার লিখিত ‘তোহফাতুল বারী শরহে সহীহ বুখারী’র ১ম ও ২য় খন্ড, ‘ফাযায়েলে তালীম, ‘হাদীসের দলিলসহ নবীজীর ৩০ প্রকার নামাজ’………….প্রভৃতি কিতাব পাঠ করেছি। আলহামদুলিল্লাহ, তার প্রতিটি কিতাবে রুহানিয়্যাত থাকায় আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে। বক্ষ্যমান কিতাবটিতে তকরীজ (বাণী) দেয়ার জন্য লেখক আমাকে অনুরোধ জানায়। কিন্তু শাইখুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমাদ শফী দা. বা. এর মতো ব্যক্তিত্ব কিতাবে তকরীজ দেয়ার পর আমার তকরীজের কোনো প্রয়োজন হয় না। তথাপি লেখকের বারবার অনুরোধের কারণে কিছু লিখে দিলাম। মাওলানা আবদুর রহমান আজাদ আমার সাথে ইসলাহী সম্পর্ক রাখে। মদিনায় একটি প্রোগ্রামে আমার সাথে সাক্ষাত হয়েছিলো। এরপর থেকে মাঝে মধ্যে ফোনে কথা হয়। আমি ছেরেফ আল্লাহর জন্যই তাকে মুহাব্বত করি এবং খুব বেশি মুহাব্বত করি। ফলে কখনো রওজার পাশে দাঁড়িয়ে আবার কখনো বাইতুল্লাহর গেলাফ ধরে তার জন্য দুআ করেছি। সর্বশেষ গত ১০/০২/২০১৮ তারিখে বাংলাদেশে সফরে এসে তাকে খেলাফত দিয়েছি। দুআ করি আল্লাহ পাক যেন দুনিয়া ও আখেরাতে তাকে ভরপুর কামিয়াবী দান করেন এবং তার সকল খেদমতকে নাফে’ আম বানিয়ে দেন।-আমীন
.png)
.jpg)